Posts

রুনু

আমাদের এখানে একটা পার্ক আছে। কলেজ থেকে ফিরে মাঝে মাঝে হাঁটি সন্ধ্যাবেলায়। পার্কে অনেকের  সাথেই মুখ চেনা হয়ে গেছে। এক ভদ্রলোক তার ছেলেকে নিয়ে আসেন। ছেলেটির  নাম রুনু, বয়স ছয় কী সাত।  রুনুর একটা কঠিন ব্যাধি রয়েছে, সেই কারণে সে হাঁটতে পারে না। ওর বাবা ওকে wheelchair-এ করে পার্ক ঘোরান। আমার বাচ্চাদের সাথে খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব হয়। রুনুর সাথেও খুব কম সময়ের মধ্যে সখ্যতা হয়ে গেছে। আমাকে দেখলেই বলবে, কাকু ক্যাডবেরি খবো। ক্যাডবেরি কিনে দিলে সে তার এক টুকরো আমাকে দেবে, এক টুকরো বাবাকে আর বাকিটা নিজে খাবে, আর ফোক্‌লা দাঁতের হাঁসি হাঁসবে। পার্কের ওর বয়সী অন্য বাচ্চাদের সাথে রুনুর বিশেষ ভাব নেই: ওরা ওকে পাত্তা  দেয় না, ওদেরকেও ও পাত্তা দেয় না।  ইদানিং আর পার্কে যাওয়া হয় না তেমন। মাঝে মাঝে যাই। কিন্তু রুনু আর সুনীলবাবু কে দেখি না।  কাল  গিয়ে খোঁজ নিলাম, পার্কে যারা রেগুলার আসেন তাদের কাছে।  তপনবাবু বলে একজন আসেন, রিটায়ার্ড হেডমাস্টার।  ওনার কাছে শুনলাম, রুনু নাকি মাঝে হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়াতে  ওকে বম্বে নিয়ে যাওযা হয়। চিকিৎসা কিছুদিন চলে, কিন্তু রুনুকে আর বাঁচানো যায় নি।   পার্ক

জ্বর

আজ অনেকদিন বাদে গরপারে ডাক্তার পি কে দত্তর চেম্বারে গেলাম। ঠিক করেছি যে ছোটখাটো জ্বর-জারি হলে আর আ্যলোপ্যাথি ডাক্তার দেখাবো না। হোমিওপ্যাথিতে সারার হলে সারবে, না হলে এমনিই সারবে।  ডাক্তারবাবু স্বাভাবিক কারণেই আমায় চিনতে পারলেন না। শেষ এসেছি সেই কোন ছোটবেলায়। বাবার নাম বলাতে চিনতে পারলেন। 'তুমি এত বড় হয়ে গ্যাছো!' 'রাস্তায় দেখলে তো চিনতেই পারতুম না। ছোটবেলায় মায়ের সাথে আসতে। তখন তুমি কত্তোটুকু।' অবশ্য আমিও ওনাকে দেখলে চিনতে পারতাম না। চুল সবই পেকে গেছে। আগে গোঁফ ছিল, সেটা আর এখন নেই। আগে চেহারাটা বেশ ভারিক্কি ছিল, এখন আর তা নেই। তবে ওনার ছোট্ট চেম্বারটা অবিকল এক রকম আছে। পেশেন্ট এলে যে বেঞ্চগুলোয় বসে, সেগুলো একই আছে। তিনটে তাক-ভর্তি সারিসারি ওষুধের শিশি। আর সিলিং-এ একটা খুব ছোট পাখা।  'তা এখন কি করচো?'  'কলেজে পড়াচ্ছি।'  কলেজে পড়াচ্ছ? বা বা! কত্তো বড় হয়ে গ্যাছো আ্যঁ!'  বড় হয়ে যাওয়া নিয়ে আরো বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা চললো। যাই হোক, জ্বর হয়েছে শুনে আগের মতো এটাসেটা মিশিয়ে দু-শিশি ওষুধ তৈরি করে  দিলেন। (এখন আর আগের মতো কর্ক নেই, শিশি'র মুখে প্লাস্টিকের ছ

ট্রেন লেট

সালটা ২০০৩ । আমি সদ্য বি.এড পাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে কল্যানীতে একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছি । কল্যানী মেইন স্টেশনে নেমে রিক্সা করে মিনিট পনের মত গেলেই স্কুল । কলকাতা থেকে কল্যানী ডেইলি প্যাসেন্জারী করার ব্যাপারটা সবে সয়ে যেতে শুরু করেছে । অনেকে বলেছিল কল্যানীতে ঘর ভাড়া নিতে, কিন্তু দিনের শেষে আমার নিজের বাড়িতে, নিজের খাটে না শুলে ঘুম আসে না । অতয়েব দিনে প্রায় দের ঘন্টা–দের ঘন্টা তিন ঘন্টা লাগলেও ডেইলি প্যাসেন্জারী অভ্যাস করে নিলাম । আর সত্যি কথা বলতে কি , দেখলাম খুব একটা অসুবিধে হচ্ছে না । স্কুলে আমাদের একটা ৬-৭ জনের দল তৈরী হয়েছে । সবাই কলকাতার দিকে থাকি । কেউ দমদম , কেউ উল্টোডাঙ্গা, কেউ বাগুইআটি । তাই একসাথে হইহই করতে করতে স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে ফেরা – সময়টা ভালই কেটে যাচ্ছে ।   সামনে পুজো , তাই প্ল্যান চলছে পুজোর ছুটিতে কোথাও যাওয়া যায় কিনা । আমি ছাড়া ২০০৩-এ আরো দুজন জয়েন করেছে , সুমনা আর বিনয় । সুমনার বাড়ি কাঁচড়াপাড়ায়, বিনয়ের মদনপুর । আমাদের থেকে প্রায় দশ বছরের সিনিয়র কয়েকজন দাদা-দিদি আছেন যাদের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে কিছুদিনের মধ্যেই । আমরা